কুয়েত ভিসা প্রসেসিং এর নিয়ম Kuwait Visa Processing For Bangladesh

বিশ্বের মধ্যে অন্যতম ধনী রাষ্ট্র হলো কুয়েত। কুয়েতে টাকার মান বিশ্বের সব দেশ থেকে অনেক বেশি। এদেশে বাংলাদেশের প্রচুর কর্মী কাজ করে থাকে। তবে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রসেসিং খুব কঠিন এবং ব্যয়বহুল। দালালদের দৌরত্বের কারণে অধিকাংশ মানুষ কুয়েতে প্রবেশ করতে পারে না ভুয়া ভিসার কারণে। নিচে কুয়েত ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আপনি যদি কুয়েতে কাজ করতে ইচ্ছুক হন অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন আশা করি আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্যটি পাবেন।

কুয়েত ভিসার ধরন (সংক্ষেপে)

ওয়ার্ক ভিসা (Employment Visa)

  • বিদেশি কর্মীদের জন্য।
  • কুয়েতের কোনো কোম্পানি বা স্পন্সরের আমন্ত্রণ/চাকরির চুক্তি থাকতে হয়।
  • সাধারণত ২ বছরের জন্য ইস্যু হয় এবং নবায়নযোগ্য

ফ্যামিলি ভিসা (Dependent Visa)

  • কুয়েতে বৈধভাবে থাকা ব্যক্তি তার স্ত্রী/সন্তানকে আনতে পারেন।
  • নির্দিষ্ট ইনকাম লেভেল থাকা জরুরি।

ট্যুরিস্ট ভিসা

  • স্বল্প সময়ের জন্য (সাধারণত ৯০ দিন)।
  • বাংলাদেশিদের জন্য সরাসরি ট্যুরিস্ট ভিসা অনেক ক্ষেত্রে সীমিত।

বিজনেস ভিসা

  • ব্যবসায়িক মিটিং বা কনফারেন্সের জন্য।

ট্রানজিট ভিসা

  • অন্য দেশে যাওয়ার পথে কুয়েতে অবস্থানের জন্য।

কুয়েত ওয়ার্ক ভিসা (Employment Visa) হলো বিদেশি কর্মীদের জন্য সবচেয়ে বেশি নেওয়া ভিসা। বাংলাদেশ থেকেও অনেকেই কুয়েতে কাজের সুযোগ পান। নিচে পুরো প্রসেসিংটি সহজভাবে দিলাম।চাকরি ও ভিসা অনুমোদন প্রথমে কুয়েতের কোনো কোম্পানি/স্পন্সর আপনাকে চাকরির অফার লেটার দেবে। কোম্পানি কুয়েতের Ministry of Interior থেকে ভিসা অনুমোদন (Work Permit) সংগ্রহ করবে।

ডকুমেন্ট সংগ্রহ (বাংলাদেশ থেকে)

  • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)
  • কুয়েত কোম্পানির ভিসা অনুমোদনের কপি
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল রিপোর্ট (গালফ অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার থেকে)
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট (প্রয়োজন হলে)
  • ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)

মেডিকেল টেস্ট

  • বাংলাদেশে GAMCA/GCC অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারে টেস্ট করতে হবে।
  • হেলথ রিপোর্ট ক্লিয়ার হলে ভিসা স্ট্যাম্পের জন্য আবেদন করা যাবে।

ভিসা স্ট্যাম্পিং

  • ঢাকায় কুয়েত এম্বাসি তে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়।
  • সব ডকুমেন্ট যাচাই শেষে ভিসা স্ট্যাম্প করা হয়।

কুয়েতে গমন

  • ভিসা পাওয়ার পর এয়ার টিকিট কেটে কুয়েত যেতে পারবেন।
  • কুয়েতে গিয়ে কোম্পানি আপনার Civil ID (Iqama) তৈরি করবে, যেটা হলো রেসিডেন্স পারমিট

আনুমানিক খরচ

  • মেডিকেল: প্রায় ৬,০০০ – ৮,০০০ টাকা
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: প্রায় ৫০০–১,০০০ টাকা
  • ভিসা স্ট্যাম্পিং ফি: প্রায় ২,০০০–৩,০০০ টাকা
  • অন্যান্য প্রসেসিং/সার্ভিস চার্জ মিলিয়ে মোট খরচ স্পন্সর বহন করলে কম হয়, আর এজেন্সি হলে ১.৫–৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

প্রসেসিং সময়

  • ভিসা অনুমোদনের পর বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ প্রসেসিং শেষ হতে সাধারণত ৪–৮ সপ্তাহ লাগে।

কুয়েতে বাংলাদেশিদের জন্য মূলত শ্রমনির্ভর (blue-collar) কাজের চাহিদা বেশি, তবে কিছু দক্ষ (skilled) কাজেও সুযোগ আছে।

 কুয়েতে বেশি চাহিদার কাজ (২০২৫)

  • নির্মাণ ও শ্রমিক কাজ
  • সাধারণ শ্রমিক (General Worker)
  • রাজমিস্ত্রি (Mason)
  • ইলেকট্রিশিয়ান
  • প্লাম্বার
  • ওয়েল্ডার
  • স্টিল ফিক্সার
  • পেইন্টার

 ড্রাইভিং ও ট্রান্সপোর্ট

  • লাইট ড্রাইভার
  • হেভি ট্রাক/বাস ড্রাইভার
  • ডেলিভারি ড্রাইভার

সার্ভিস সেক্টর

  • ক্লিনার
  • হাউসকিপিং স্টাফ
  • হেল্পার
  • সুপারমার্কেট ও সেলস বয়
  • সিকিউরিটি গার্ড

হসপিটালিটি ও রেস্টুরেন্ট

  • কুক/শেফ
  • কিচেন হেল্পার
  • ওয়েটার

 স্বাস্থ্য খাত (স্কিল্ড জব)

  • নার্স (কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ হয়)
  • কেয়ারগিভার

বেতন পরিসর (গড়ে)

  • সাধারণ শ্রমিক: ৮০ – ১২০ কুয়েতি দিনার (KWD)
  • ড্রাইভার: ১২০ – ২০০ KWD
  • টেকনিশিয়ান/ইলেকট্রিশিয়ান/ওয়েল্ডার: ১২০ – ১৮০ KWD
  • রেস্টুরেন্ট স্টাফ: ১০০ – ১৫০ KWD
  • নার্স/হেলথ কেয়ার: ২৫০ – ৩৫০ KWD

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • বেশিরভাগ আনস্কিল্ড চাকরি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে হয়।
  • স্কিল্ড কাজ পেতে হলে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট ও প্রমাণপত্র থাকলে ভালো।
  • কুয়েতের ভিসা সিস্টেম মূলত স্পন্সর/কোম্পানি নির্ভর, তাই সরাসরি চাকরির অফার পাওয়া সবচেয়ে ভালো উপায়।

 কুয়েত ভিসার সুবিধা

  •  ভালো আয় সুযোগ
  • সাধারণ শ্রমিকও মাসে গড়ে ৮০–১২০ KWD (প্রায় ৩০–৪৫ হাজার টাকা) আয় করতে পারে।
  •  স্কিল্ড কাজ (ড্রাইভার, টেকনিশিয়ান, কুক, নার্স) হলে আয় আরও বেশি।
  • ট্যাক্স-ফ্রি দেশ
  • কুয়েতে আয়কর নেই, তাই পুরো বেতন হাতে পাওয়া যায়।
  • ওভারটাইম সুযোগ
  •  অনেক কোম্পানিতে ওভারটাইম কাজ করে অতিরিক্ত আয় করা যায়।
  • পরিবার নেওয়ার সুযোগ
  • স্থায়ীভাবে কাজ করলে নির্দিষ্ট ইনকামের শর্ত পূরণ করে স্ত্রী-সন্তানকে ফ্যামিলি ভিসায় আনা যায়।
  • স্বাস্থ্যসেবা কুয়েতে সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে ভালো মানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়।

 কুয়েত ভিসার অসুবিধা

  • স্পন্সর সিস্টেম (Kafala System)
  • কাজের ভিসা সবসময় কোম্পানি বা স্পন্সরের অধীনে থাকে। চাকরি বা কোম্পানি পরিবর্তন করা কঠিন।
  • ভিসা জালিয়াতি ঝুঁকি
  • অনেক ভুয়া এজেন্সি বা দালাল নকল ভিসা দিয়ে প্রতারণা করে।
  • আবাসন ও জীবনযাত্রা
  • চাকরি বদলের সীমাবদ্ধতা
  •   নির্মাণ ও সার্ভিস সেক্টরে কাজের সময় অনেক দীর্ঘ হয় (৮–১২ ঘণ্টা, অনেক সময় ওভারটাইম সহ)।

 সারসংক্ষেপ

কুয়েত ভিসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ট্যাক্স-ফ্রি ভালো আয় ও ফ্যামিলি নেওয়ার সুযোগ। আর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো স্পন্সর নির্ভরতা (কাফালা সিস্টেম) ও ভিসা জালিয়াতির ঝুঁকি।

 কুয়েত ভিসা প্রসেসিং – FAQ (প্রশ্নোত্তর)

১. কুয়েত ভিসার কত ধরনের আছে?

  • ওয়ার্ক ভিসা (Employment Visa)
  • ফ্যামিলি ভিসা (Dependent Visa)
  • ট্যুরিস্ট ভিসা
  • বিজনেস ভিসা
  • ট্রানজিট ভিসা

২. বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কোন ভিসা নেওয়া হয়?

বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা (চাকরির ভিসা) সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত।

৩. কুয়েত ওয়ার্ক ভিসার জন্য কী কী ডকুমেন্ট লাগে?

  • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)
  • কুয়েতের কোম্পানির ভিসা অনুমোদন কপি
  • মেডিকেল রিপোর্ট (GAMCA মেডিকেল সেন্টার থেকে)
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে)
  • শিক্ষাগত/অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়)

৪. কুয়েত ভিসার খরচ কত?

খরচ নির্ভর করে ভিসার ধরণ ও কে বহন করছে তার উপর:

  • মেডিকেল: ৬,০০০ – ৮,০০০ টাকা
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: ৫০০ – ১,০০০ টাকা
  • ভিসা স্ট্যাম্পিং: ২,০০০ – ৩,০০০ টাকা
  • যদি রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে নেওয়া হয়, তবে ১.৫ – ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

৫. ভিসা প্রসেসিং সময় কত লাগে?

সাধারণত কুয়েত থেকে ভিসা অনুমোদন আসার পর বাংলাদেশে সম্পূর্ণ প্রসেসিং শেষ হতে ৪–৮ সপ্তাহ সময় লাগে।

৬. ভিসা জাল বা ভুয়া হলে কীভাবে বুঝবো?

ভিসা অবশ্যই কুয়েত মন্ত্রণালয়ের (Ministry of Interior) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চেক করে নিতে হবে। শুধু কাগজ দেখে বিশ্বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ।

Leave a Comment