কিভাবে আপনি ফ্রান্সের ভিসা প্রসেসিং করবেন France visa application online

ফ্রান্স ভিসা প্রসেসিং মূলত শেনজেন ভিসা (Schengen Visa) এর আওতায় হয়। বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ, পড়াশোনা, কাজ বা পরিবার পুনর্মিলন যেকোনো উদ্দেশ্যে ফ্রান্সে যেতে হলে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হয়। নিচে ভিসা প্রসেসিং এর ধাপগুলো দেওয়া হলো

 ফ্রান্স ভিসার ধরন

1.শর্ট-টার্ম ভিসা (C-Type / Schengen Visa)

৯০ দিনের কম অবস্থানের জন্য (ট্যুরিস্ট, বিজনেস, কনফারেন্স, ভিজিট ইত্যাদি)।

  1. লং-টার্ম ভিসা (D-Type Visa)

৯০ দিনের বেশি অবস্থান (স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক, ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ইত্যাদি)।

ফ্রান্স শর্ট-টার্ম শেনজেন ভিসা (C-Type)

এটি মূলত ৯০ দিনের কম সময়ের জন্য দেওয়া হয়। সাধারণত ট্যুরিস্ট, বিজনেস, কনফারেন্স, ফ্যামিলি/ফ্রেন্ড ভিজিট ইত্যাদি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

 প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (শর্ট-টার্ম ভিসার জন্য)

সাধারণ কাগজপত্র
  • অনলাইন ভিসা আবেদন ফরম (France-Visas ওয়েবসাইট থেকে পূরণ করতে হবে)
  • বায়োমেট্রিক ছবি (২ কপি, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, ৩.৫×৪.৫ সাইজ)
  • পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে + পুরনো পাসপোর্ট থাকলে সেটিও)
  • ভিসা ফি জমার রসিদ

ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র

  • ফ্লাইট বুকিং / রিজার্ভেশন
  • হোটেল বুকিং / আবাসনের প্রমাণ (বা ফ্রান্সে থাকলে আমন্ত্রণপত্র Attestation d’accueil)
  • ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স (ন্যূনতম €30,000 কাভারেজ সহ, পুরো শেনজেন অঞ্চলের জন্য বৈধ)

আর্থিক ও কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কাগজপত্র

  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বশেষ ৬ মাসের, পর্যাপ্ত ব্যালেন্স সহ)
  • চাকরিজীবী হলে: চাকরির সনদপত্র + সেলারি স্লিপ (৩ মাস) + NOC (No Objection Certificate)
  • ব্যবসায়ী হলে: ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স সার্টিফিকেট, ব্যবসার কাগজপত্র

অতিরিক্ত ডকুমেন্টস (যদি প্রযোজ্য হয়)

  • ছাত্র হলে স্টুডেন্ট আইডি + ইনস্টিটিউশনের লেটার
  • আমন্ত্রণপত্র (ফ্যামিলি/বন্ধু ভিজিট হলে)
  •  বিজনেস/কনফারেন্স ইনভাইটেশন (অফিশিয়াল ভ্রমণ হলে)

ফ্রান্স ভিসা আবেদন করার ধাপ

  1. France-Visas ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করুন।
  2. ফরম প্রিন্ট করে সব ডকুমেন্টসসহ VFS Global France Visa Application Center (ঢাকা)-তে জমা দিন।
  3. আবেদন জমা দেওয়ার সময় বায়োমেট্রিক (ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি) দিতে হবে।
  4. ভিসা প্রসেসিং শেষে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।

ফ্রান্স ভিসা ভিসা ফি

  •  প্রাপ্তবয়স্ক: €80
  •  শিশু (৬–১২ বছর): €40
  •  শিশু (৬ বছরের নিচে): ফ্রি
  •  বাংলাদেশি টাকায় রেট অনুযায়ী দিতে হয়

ফ্রান্স ভিসা প্রসেসিং টাইম

সাধারণত ১৫–২১ কর্মদিবস লাগে। ট্যুরিস্ট সিজনে সময় বেশি লাগতে পারে। ফ্রান্স লং-টার্ম ভিসা (D-Type Visa) এই ভিসা তাদের জন্য যাদের ৯০ দিনের বেশি সময় ফ্রান্সে অবস্থান করতে হবে। সাধারণত স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক, ফ্যামিলি রিইউনিয়ন বা রিসার্চ/অফিসিয়াল কাজের জন্য দেওয়া হয়।

ফ্রান্স ভিসা লং-টার্ম ভিসার ধরণ

  1. স্টুডেন্ট ভিসা (Study Visa) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা উচ্চশিক্ষার জন্য।
  2. ওয়ার্ক ভিসা (Work Visa) চাকরি, কনট্রাক্ট বা স্কিলড ওয়ার্কারদের জন্য।
  3. ফ্যামিলি রিইউনিয়ন (Family Reunion) ফ্রান্সে থাকা স্বামী/স্ত্রী, বাবা-মা বা পরিবারের সাথে একত্রে বসবাসের জন্য।
  4. রিসার্চার / প্রফেশনাল ভিসা গবেষণা, অফিসিয়াল কাজ বা বিশেষ ক্ষেত্রে।
  5. ভিজিটর ভিসা (Long Stay Visitor)

যাদের কাজ বা পড়াশোনা নয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে থাকতে চান (যেমন নিজের খরচে বাস করা)।

 প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (সাধারণভাবে)

  • অনলাইন আবেদন ফরম (France-Visas ওয়েবসাইটে পূরণ)
  • পাসপোর্ট (কমপক্ষে ১২ মাস মেয়াদ থাকতে হবে + পুরনো পাসপোর্ট)
  • বায়োমেট্রিক ছবি (২ কপি, ৩.৫×৪.৫ সাইজ)
  • ভিসা ফি রসিদ**
  • আবাসনের প্রমাণ (ভাড়া বাসা চুক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল কনফার্মেশন)
  • আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্পনসরশিপ, স্কলারশিপ, চাকরির অফার লেটার)
  • ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স (সর্বনিম্ন €30,000 কভারেজ সহ, ভিসার মেয়াদ পর্যন্ত)
যদি স্টুডেন্ট ভিসা হয়
  •  ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়/ইনস্টিটিউশনের অফার লেটার / এনরোলমেন্ট লেটার
  • টিউশন ফি পরিশোধের প্রমাণ (যদি প্রয়োজন হয়)
  • স্পনসরশিপ/স্কলারশিপ ডকুমেন্টস
  •  একাডেমিক ডকুমেন্টস (সার্টিফিকেট, মার্কশিট)
 যদি ওয়ার্ক ভিসা হয়
  • ফরাসি নিয়োগদাতার চাকরির চুক্তিপত্র (Work Contract)
  •  ফ্রান্সের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন (Work Authorization / OFII)
  •  অভিজ্ঞতার সনদ / সিভি
 যদি ফ্যামিলি রিইউনিয়ন হয়
  •  ফ্রান্সে থাকা পরিবারের লিগ্যাল রেসিডেন্স পারমিট
  •  সম্পর্ক প্রমাণের কাগজপত্র (বিয়ে/জন্ম নিবন্ধন সনদ, নোটারি অনুবাদসহ)
  •  ফ্রান্সে পরিবারের বাসস্থানের কাগজপত্র

ভিসা ফি

  •  সাধারণত €99 (বাংলাদেশি টাকায় রেট অনুযায়ী)
  •  কিছু স্টুডেন্ট ভিসা বা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে কম হতে পারে

 প্রসেসিং টাইম

  •  সাধারণত ৪–৮ সপ্তাহ সময় লাগে (ভিসার ধরন অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে)
  •  ওয়ার্ক ভিসা ও ফ্যামিলি রিইউনিয়নে বেশি সময় লাগে

আবেদন প্রক্রিয়া

  1. France-Visas ওয়েবসাইটে গিয়ে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করতে হবে।
  2. ফরম ও ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে VFS Global France Visa Application Center (ঢাকা)-তে।
  3. আবেদন জমার সময় বায়োমেট্রিক (ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি) দিতে হবে।
  4. ভিসা পেলে ফ্রান্সে পৌঁছে স্থানীয় OFII অফিসে নিবন্ধন করতে হবে (বিশেষত স্টুডেন্ট ও ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে)।

 

ফ্রান্স ভিসা প্রসেসিং প্রশ্নোত্তর (FAQ)

 ১. ফ্রান্স ভিসা কয় ধরনের হয়?

শর্ট-টার্ম (C-Type / Schengen Visa): সর্বোচ্চ ৯০ দিন অবস্থান (ট্যুরিস্ট, বিজনেস, ভিজিট)।

লং-টার্ম (D-Type): ৯০ দিনের বেশি (স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক, ফ্যামিলি রিইউনিয়ন, রিসার্চ)।

 ২. বাংলাদেশ থেকে কোথায় ফ্রান্স ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়?

ঢাকার VFS Global France Visa Application Center -এর মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।

 ৩. ফ্রান্স ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে?

  •  পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬–১২ মাস মেয়াদ)
  •  বায়োমেট্রিক ছবি
  •  ভিসা আবেদন ফরম
  •  ফ্লাইট বুকিং + হোটেল বুকিং / আমন্ত্রণপত্র
  •  ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬ মাস)
  •  চাকরির সনদ / ব্যবসার কাগজপত্র / স্টুডেন্ট প্রমাণপত্র
  •  ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স (€30,000 কাভারেজ সহ)

 ৪. ফ্রান্স ভিসা ফি কত?

শর্ট-টার্ম শেনজেন ভিসা: প্রাপ্তবয়স্ক €80, শিশু (৬–১২ বছর) €40, ৬ বছরের নিচে ফ্রি।

লং-টার্ম ভিসা (স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক ইত্যাদি): সাধারণত €99।

 ৫. ফ্রান্স ভিসা প্রসেসিংয়ে কতদিন লাগে?

শর্ট-টার্ম ভিসা: সাধারণত ১৫–২১ কর্মদিবস।

লং-টার্ম ভিসা: সাধারণত ৪–৮ সপ্তাহ (স্টুডেন্ট/ওয়ার্ক/ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভেদে ভিন্ন)।

Leave a Comment